শনিবারের বিকেলটা আর পাঁচটা সাধারণ বিকেলের মতো ছিল না চট্টগ্রামের জন্য। রাজনীতির উত্তপ্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যখন বিএনপির ‘তারুণ্যের মহাসমাবেশ’, ঠিক তখনই সেখানে এক অভাবনীয় দৃশ্য! ক্রিকেটের ২২ গজ কাঁপানো, বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভ ও চট্টগ্রামের নয়নের মণি তামিম ইকবাল খানকে দেখা গেল সেই রাজনৈতিক মঞ্চের কাছাকাছি। ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড ময়দানে আয়োজিত এই সমাবেশে তাঁর উপস্থিতি যেন এক মুহূর্তেই সমস্ত ক্যামেরার লেন্স এবং আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিল। প্রশ্ন একটাই – ক্রিকেটের রাজপুত্র কি এবার রাজনীতির নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছেন?
পলোগ্রাউন্ডে জনতার স্রোত, আকর্ষণের কেন্দ্রে তামিম
‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ – এই শিরোনামে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের যৌথ আয়োজনে মুখরিত ছিল পলোগ্রাউন্ড। হাজার হাজার তরুণ নেতাকর্মীর উচ্ছ্বাস আর স্লোগানে যখন মাঠ প্রকম্পিত, তখনই তামিম ইকবালের আগমনের খবর বাড়তি উন্মাদনা যোগ করে। চট্টগ্রামের সন্তান হিসেবে তাঁর এই উপস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ক্রিকেট মাঠে যাঁর ব্যাট কথা বলে, রাজনৈতিক সমাবেশে তাঁর নীরব উপস্থিতিই যেন অনেক বার্তার ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
মঞ্চে শীর্ষ নেতৃত্ব, ভার্চুয়ালে তারেক রহমান
সমাবেশে বিএনপির শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টার কমতি ছিল না। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর সাথে মঞ্চ ভাগ করে নেন দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শুধু তাই নয়, নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সুদূর লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সমাবেশে যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার নানা দিক।
স্লোগানে মুখর চট্টগ্রাম, ৯৯ উপজেলার সম্মিলন
এদিন সকাল থেকেই চট্টগ্রাম মহানগরীসহ বিভাগের প্রায় ৯৯টি উপজেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা পলোগ্রাউন্ডের পানে ছুটতে থাকেন। ব্যানার, ফেস্টুন আর দলীয় পতাকায় ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল, যা জানান দিচ্ছিল বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতার চিত্র। তরুণদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো, আর সেই তরুণদের মাঝে তামিম ইকবালের মতো একজন জাতীয় বীরের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে তাদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল।
শেষ কথা ):
ক্রিকেট মাঠের এই লড়াকু সৈনিকের রাজনৈতিক সমাবেশে আগমন কি নিছকই এক সৌজন্যতা, নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো গভীর রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ? তামিম ইকবালের এই পদচারণা চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নতুন কোনো আলোচনার জন্ম দিল কিনা, সেই উত্তর হয়তো সময়ই দেবে। তবে এটা স্পষ্ট যে, তাঁর উপস্থিতি বিএনপির এই সমাবেশকে এক ভিন্ন আলোচনার স্তরে পৌঁছে দিয়েছে, যা জাতীয় গণমাধ্যমেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।